ওযুতে ঘাড় মাসাহ কী সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত? কেউ কেউ ঘাড় মাসাহ করাকে বিদআত বলে থাকেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন।
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله
উত্তর: কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা আমাদেররে ওযু শিক্ষা দিলেন এভাবে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ
অর্থ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ করো এবং পদযুগল গিট পর্যন্ত ধৌত করো।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ রাযি. নবীজি ﷺ ওযু কিভাবে করতেন, সেটা দেখাতে গিয়ে এক পর্যায়ে দেখালেন-
ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ
অর্থাৎ তারপর দু’হাত দিয়ে মাথা মাসাহ করলেন। অর্থাৎ হাত দু’টি সামনে এবং পেছনে নিলেন। মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত পেছনের চুলের শেষ প্রান্ত অর্থাৎ ঘাড় পর্যন্ত নিলেন। তারপর আবার যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, সেখানেই ফিরিয়ে আনলেন। তারপর দু’পা ধুলেন। (সহীহ বুখারী হাদিস: ১৮৫)
ওযুতে ঘাড় তথা গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব৷ কেউ কেউ যদিও এটিকে বিদআত বলেন৷ কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীস ও সালাফ থেকে যে আমলটি প্রমাণিত, তা বিদআত বলা মোটেও ঠিক নয়৷
عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ بِيَدَيْهِ عَلَى عُنُقِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থ: ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অজু করে এবং উভয় হাত দিয়ে গর্দান মাসাহ করে, তাকে কিয়ামতের দিন (আযাবের) বেড়ি পরানো থেকে বাঁচানো হবে। (নাইলুল আওতার: ১/২০৭)
ইমাম আবুল হাসান ফারিস রাহ. বলেন:
وَقَالَ هَذَا إنْ شَاءَ اللَّهُ حَدِيثٌ صَحِيحٌ
ইনশাআল্লাহ হাদীসটি সহীহ।
(তালখীসুল হাবীর-১/৯৩, নাইলুল আওতার: ১/২০৭)
قال الحافظ ابن حجر في التلخيص : فيحتمل أن يقال هذا، وإن كان موقوفا فله حكم الرفع ، لأن هذا لا يقال من قبيل الرأي فهو على هذا مرسل انتهى
অর্থাৎ ইবনু হাজার রাহ. তালখীসুল হাবীর নামক কিতাবে বলেন: বর্ণনাটি সম্পর্কে একথা বলা যায় যে, যদিও তা মাওকুফ (একজন তাবেয়ীর কথা) হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা মারফু' (রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীস) হিসাবে গণ্য হবে। কেননা, তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়।
(তালখীসুল হাবীর: ১/১৬২ নাইলুল অাওতার: ১/২০৩)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا مَسَحَ رَأْسَهُ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রাযি. যখন মাথা মাসাহ করতেন, তখন মাথা মাসহের সাথে গর্দানও মাসাহ করতেন। (বায়হাকী হাদীস নং- ২৭৯)
عَنْ طَلْحَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ رَأْسَهُ هَكَذَا وَأَمَرَّ حَفْصٌ بِيَدَيْهِ عَلَى رَأْسِهِ حَتَّى مَسَحَ قَفَاهُ
অর্থ: তালহা তিনি তার পিতা, তিনি তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি নবীজী ﷺ কে দেখেছি, তিনি অজু করছেন। তখন তিনি এভাবে মাথা মাসাহ করেছেন, উভয় হাতকে একত্র করে তা দিয়ে গর্দান মাসাহ করতেন। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা হাদীস নং- ১৫০)
আল্লামা কাসানী রাহ. বাদায়েউস সানায়ে'তে লিখেন:
قال أبو بكر الأعمش إنه سنة وقال أبوبكر الإسكاف إنه آداب.
অর্থাৎ তাবেয়ী আবু বকর আ'মাশ রাহ. বলেন: ঘাড় মাসাহ করা সুন্নাত৷ আবু বকর ইসকাফ রাহ. বলেন: (ওযুতে) ঘাড় মাসাহ আদাব৷ (বাদায়েউস সানায়ে' ১/৯৯)
قال في الد المختار (في مستحبات الوضوء) ومسح الرقبة لظهر يديه (لاالحلقوم) لأنه بدعة.
অর্থাৎ আদ্দুররুল মুখতারে ওযুর মুস্তাহাবসমূহের আলোচনায় বলা হয়েছে, এবং হাতের পৃষ্ঠদেশ দ্বারা ঘাড় মাসাহ (মুস্তাহাব)৷ গলা মাসাহ নয়, কেননা গলা মাসাহ বিদআত৷ (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১২৪)
সর্বশেষ কথা হলো, ঘাড় মাসাহের হাদীসসমূহ সহীহের মানে উন্নীত না হলেও সবগুলো রেওয়ায়াত মিলিয়ে হাসান লিগাইরিহীর পর্যায়ের৷ কেননা যঈফ হাদীস বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হলে তা হাসান লিগাইরিহী হয়ে যায়৷ তাছাড়া কোনো কোনো মুহাদ্দিস তো 'ইনশাআল্লাহ'র সাথে সহীহ বলেছেন৷ যেমন উপরে ইমাম আবুল হাসান ফারিস রাহ.র উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়েছে৷
যার কারণে সাহাবা, তাবেয়ীন, ইমামগণ, মুহাদ্দিসীন ও ফুকাহায়ে কেরাম থেকে ঘাড় মাসাহের আমলটি প্রমাণিত৷ শুধু তাই নয়, আহলে হাদীস ভাইদের কাছে মান্যবর আলেমগণ থেকেও ওযুতে ঘাড় মাসাহের ব্যাপারটি ইতিবাচকভাবে প্রমাণিত৷ যেমন আল্লামা শাওকানী, আল্লামা বাগাভী, ইবনু সায়্যিদিন নাস, নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ৷
والله تعالي أعلم بالصواب.
উত্তর প্রদানে-
মুফতি জিয়াউর রহমান