আমাদের দেশে আরাফার রোযা কবে?
- Mufti Ziaur Rahman
- Sunday 08 June 2025
- 4 MIN READ

আরাফার রোযার ফযীলত ও আমাদের দেশে আরাফার দিবসের রোযা কোনদিন?
যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও ফযীলতপূর্ণ। এই দশদিনের আমল ও ইবাদত আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন-
ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذا الأيام، قيل : ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال: ولا الجهاد في سبيل الله إلا من خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء.
অর্থাৎ এমন কোনো দশক (দশদিন) নেই, যার নেক আমল আল্লাহর কাছে এই দিনগুলোর চেয়েও বেশি প্রিয়। আরজ করা হলো, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি নয়? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়, তবে যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে এবং কোনো কিছু নিয়েই ফিরে আসে নি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)।
(সহীহ বুখারী : ৯৬৯, কিতাবুল ঈদাইন, মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৯৬৮)
অপর হাদিসে এসেছে-
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده
অর্থ: ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)
তাছাড়া রাসূল ﷺ থেকে সুস্পষ্টভাবে ৯ যিলহজ্ব রোযা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে-
کَانَ رَسُولُ اللّٰهِ صلی الله علیه و سلم یَصُومُ تِسْعَ ذِی الحِجَّةِ وَیَومَ عَاشُورَاء.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ যিলহজ্বের ৯ম তারিখ ও মুহাররামের ১০ম তারিখ রোযা রাখতেন৷ (আবু দাউদ: ২৪৩৭, নাসাঈ: ২৩৭২, আহমদ: ২২৩৩৪, সনদ সহীহ)
আমাদের দেশে ইয়াওমুল আরাফাহ তথা আরাফার দিবসের রোযা ৯ যিলহজ্ব৷ ৮ যিলহজ্ব নয়৷ এ প্রসঙ্গে কয়েকটি পয়েন্ট আরয করব-
১. আরাফার দিবসের রোযা মানে ৯ যিলহজ্বের রোযা৷ আমাদের দেশের ৮ যিলহজ্বের রোযা নয়৷ আরাফার রোযা আরাফার ময়দানে অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত নয়৷ যদি তাই হতো, তাহলে হাজীদের জন্যেও এই রোযার বিধান থাকত৷ অথচ হাজী সাহেবদের জন্যে এ দিন রোযার বিধান নেই৷
২. আরাফার দিবসের রোযা যদি আমাদের দেশের ৮ যিলহজ্ব হতো, তাহলে পরের দিন ইয়াওমুন নাহর অর্থাৎ পরের দিন কুরবানির দিন হতো৷ অথচ সবাই ১০ যিলহজ্বই কুরবানি করেন৷ ৯ তারিখ নয়৷
৩. আরাফার দিবসের রোযা যদি আমাদের দেশের ৮ যিলহজ্ব হয়, তাহলে তাকবীরে তাশরীক তো এই দিনের ফজর থেকে শুরু হওয়ার কথা৷ অথচ তাকবীরে তাশরীক শুরু হয় ৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে৷
عن علي رضي الله عنه: أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة، إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق، ويكبر بعد العصر.
رواه ابن أبي شيبة في مصنفه وإسناده صحيح كما في الدراية.
অর্থ: আলী রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি আরাফার দিন ফজর থেকে আইয়্যামে তাশরীকের (১৩ যিলহজ্বের) আসর পর্যন্ত তাকবীরে বলতেন৷ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৭৭, ৫৬৭৮, সনদ সহীহ)
৪. আরাফার দিবস যদি আমাদের দেশের হিসাবে ৮ যিলহজ্ব পালন করা হয়, আর ১০ যিলহজ্ব ইয়াওমুন নাহর অর্থাৎ কুরবানির দিন তথা ঈদুল আযহা হয়; তাহলে ৯ যিলহজ্ব তথা মঙ্গলবার কোন্ দিবস? ৮ যিলহজ্ব আরাফার দিবস হলে আর এদিকে যেহেতু ১০ যিলহজ্ব ঈদুল আযহা তথা কুরবানির দিন, তাহলে ৯ যিলহজ্ব তো মধ্যখানে গ্যাপ থেকে যাচ্ছে৷
৫. সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে আরাফার রোযা রাখলে যেসব দেশ সৌদি আরবের পশ্চিমে অবস্থিত, তাদের চাঁদ তো একদিন আগে আকাশে উদিত হয়, সৌদি আরবের ৯ যিলহজ্ব তথা আরাফার দিন তো তাদের ১০ যিলহজ্ব হয়৷ এ দিন রোযা রাখা তো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম৷ তাহলে ওই দেশসমূহের তো সৌদির সাথে মিল রেখে আরাফার রোযা রাখা সম্ভব হচ্ছে না৷
খোদ আরব শীর্ষ আলেমের মতামত দেখুন
আরব বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসায়মীন রাহ. এ ব্যাপারে বলেন- ‘চাঁদের বিষয় নিয়ে আলেমদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। তিনি অন্যান্য সিয়ামের মত আরাফার সিয়ামকেও নিজ নিজ দেশের ৯ তারিখ অনুযায়ী রাখার মতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং আম দলীল পেশ করেছেন৷ (মাজমূআ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল: ২০/২৮)
(সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আরাফার রোযা পালনের প্রবক্তাদের সামনে ইতমামে হুজ্জত তথা চূড়ান্ত প্রামাণ্য উপস্থাপনের জন্য শায়খ ইবনু উসাইমীনের মতামত তুলে ধরলাম৷ কেননা শায়খের মতামত অগ্রগণ্য মনে করেন৷ নতুবা এমন বক্তব্য না থাকলেও নিজ নিজ দেশের ৯ তারিখ ইয়াওমে আরাফা৷)
মোটকথা আমাদের চাঁদ দেখা মতে ৮ তারিখকে আরাফার দিবস গণ্য করলে মাসআলাগত দিক দিয়ে অনেক প্রশ্ন সামনে আসে, যার সমাধান অনেক দুরূহ এবং জটিল ব্যাপার৷ যার ভিত্তি হচ্ছে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়া না হওয়ার যুগ যুগ ধরে চলে মতভিন্নতা৷
তাই প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশ ও অঞ্চলের চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই ৯ তারিখে আরাফার রোযা রাখা উচিত৷ কারণ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা সেদেশের ৯ তারিখই হচ্ছে৷
লেখক: মুফতি জিয়াউর রহমান